মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

হজে পাঠানো নিয়ে প্রতারণা বন্ধ হয়নি

হজে পাঠানো নিয়ে প্রতারণা বন্ধ হয়নি

স্বদেশ ডেস্ক:

পবিত্র হজে পাঠানোর নামে প্রতারণা অব্যাহত রয়েছে। কিছু বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকের প্রতারণায় অনেক হজযাত্রীকে দেশে ও সৌদিতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার সতর্ক করার পরও প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না।

সরকারি কোটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন থেকে কিছু ব্যক্তি সরকারিভাবে হজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার খবরও মিলেছে। এবার একটি নিবন্ধিত হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। এয়ার কানেকশন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নং-২১৮) নামে ওই এজেন্সির অফিস রাজধানীর বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারে। জানা যায়, এ বছর হজের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী যাওয়ার অনুমোদন দেয় সৌদি সরকার। পরে আরো দুই হাজার ৪১৫ জনকে পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে চার হাজার ১১৫ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ৫৯ হাজার ৮৮৫ জন বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের মাধ্যমে হজে যাচ্ছেন।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীদের ধর্ম মন্ত্রণালয় সরাসরি নিবন্ধন ও গাইড নিয়োগের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু এয়ার কানেকশন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস নামের ওই এজেন্সি সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকা হজযাত্রীদের আড়াই হাজার লোককে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে বলে একটি লিখিত আবেদন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। পরে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই জানতে পেরে ওই এজেন্সির প্রতিনিধি চিঠি তড়িঘড়ি করে প্রত্যাহার করে নিয়ে যান। শুধু তাই নয় সম্প্রতি অতিরিক্ত কোটা বৃদ্ধি পাওয়ার পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া অতিরিক্ত ১১৫ জনকে ওই এজেন্সি হজে নিয়ে যেতে চায় বলে হজ-১ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনকে টেলিফোনে জানান।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ওই এজেন্সির এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে একটি প্রতারণার কৌশল হিসেবে মনে করছে মন্ত্রণালয়। এভাবে হজযাত্রীদের পাঠানোর নাম করে ওই এজেন্সি মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ কারণে ওই এজেন্সিকে শোকজ করেছে মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই এজেন্সির এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতারণার একটি কৌশল। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে এজেন্সির জামানত বাজেয়াপ্ত এবং হজ লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এদিকে বাব-ই-মদিনা (লাইসেন্স নং-৫২৭) নামে এক হজ এজেন্সির বিরুদ্ধেও রিপ্লেসমেন্টের নামে হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার শিকার হজযাত্রী মোতালেব হোসেন জানান, রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে হজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই এজেন্সি গত ১৮ মে তিনিসহ ৫ জনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু হজের ফ্লাইট শুরু হলেও হজে নেয়ার কোনো প্রসেস না দেখতে পেয়ে তারা এজেন্সির অফিসে খোঁজ নিতে যায়। কিন্তু এজেন্সি মালিককে অফিসে না পেয়ে আশকোনা হজ ক্যাম্পেও খুঁজতে যায়। সেখানেও তাকে না পেয়ে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি ঠিকমতো ফোন ধরেন না। মাঝে মধ্যে ফোন ধরলেও নানা তালবাহানা শুরু করেন। সবশেষ গত ২০ জুন এজেন্সি মালিক জানান তাদের হজে নিতে পারবেন না। তখন টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাইলেও তিনি গড়িমসি করেন। গত ২৩ জুন এজেন্সি মালিক তাদের জানান জনপ্রতি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিলে তাদের মধ্যে ৩ জনকে হজে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে আবার জানান, জনপ্রতি ৬ লাখ টাকা করে দিলে তাদের হজে নিবেন। পরে আবার জানান, তাদের দেয়া ১৫ লাখ টাকার ৫ লাখ টাকা ফেরত দিবেন এবং তাকে নতুন করে আরো ১৩ লাখ টাকা দিলে হজে নেবেন। এভাবে হজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অব্যাহতভাবে ওই এজেন্সি মালিক প্রতারণা করে আসছেন।

একইভাবে বেসরকারি হজ এজেন্সি হক ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স নং-৩৮৯) এর বিরুদ্ধেও হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, জালাল উদ্দিন ও আহমদ ছাফা চৌধুরী নামে দুই হজযাত্রী গত ২০২০ সালে হক ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। কিন্তু ওই এজেন্সির পর্যাপ্ত হজযাত্রী না থাকায় তারা আল ইমাম হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসে হজযাত্রীদের ট্রান্সফার করে দেন। কিন্তু হক ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক ও হাবের কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদুল হক পেয়ারুকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হজযাত্রীদের নিবন্ধনের টাকা ফেরত দেননি। ফলে ওই দু’জন হজযাত্রীকে নতুন করে বিমান টিকিটের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হয়। এছাড়া মাহমুদুল হক পিয়ারুর বিরুদ্ধে নাহার ইন্টারন্যাশনাল নামে আরেক এজেন্সিও প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগ করেছে। নাহার ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, লিড এজেন্সি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হক পেয়ারুর কাছে তাদের ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩২ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু তিনি ওই টাকা না দিয়ে গড়িমসি ও হুমকি দিচ্ছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার শামিল, যা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এর পরিপন্থী। এ জন্য অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সৌদি পৌঁছেছেন ৪০ হাজার হজযাত্রী: চলতি বছর এ পর্যন্ত (২৭ জুন রাত ২টা) ৪০ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৩৮৫ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৩৬ হাজার ৮১৫ জন হজযাত্রী। মোট ১১২টি ফ্লাইটে সৌদি গেছেন হজযাত্রীরা। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ৬৪টি, সৌদি এয়ারলাইন্স পরিচালিত ৪৩টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ৫টি। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877